মধ্যযুগ
(BCS প্রিলিমিনারিতে “মধ্য যুগ” থেকে সর্বোচ্চ ৫ নম্বর থাকবে এবং অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায়ও এ অধ্যায় থেকে প্রশ্ন থাকে)
ভূমিকাঃ
১২০১ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ হিসেবে ধরা হয়। ১২০৪ সালে ইখতিয়ার উদ্দীন মুহম্মদ বখতিয়ার খলজি কতৃক নদীয়া বিজয়ের মাধ্যমে বাংলায় মুসলিম শাসনের গোড়াপত্তন হয়। বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ ছিল ধর্মকেন্দ্রিক।।অর্থাৎ ধর্মীয় আবেশে মধ্যযুগে সাহিত্য রচনা হত।
আবার মুধ্যযুগের ১২০১-১৩৫০ সাল পর্যন্ত সময়কে ভাষাবিজ্ঞানীরা অন্ধকার হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।কারন এ যুগে রামাই “পণ্ডিত কতৃক” ‘শূন্যপুরাণ’ এবং হলায়ুধ মিশ্র কতৃক “সেক শুভোদয়া” ছাড়া তেমন কোন প্রধান সাহিত্য রচিত হয় নি।
সাহিত্যকর্মঃ
ধর্মকেন্দ্রিক সাহিত্যকর্মের এই যুগে মূলত দেব-দেবীর প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়েছে,তবে মানুষের কথাও অস্বীকৃত হয় নি। সাহিত্য ছিল প্রধানত পদ্য ও গীতি নির্ভর। গদ্য সাহিত্য তখনও প্রসারিত ও পরিচিতি পায় নি।
অন্ধকার যুগ পরবর্তী মধ্যযুগের সাহিত্য কর্ম গুলোকে ভাষাবিদেরা দুটি ভাগে ভাগ করেছেন।তা হল-
১) মৌলিক সাহিত্যঃ
মৌলিক সাহিত্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন,বৈষ্ণব পদাবলী,মঙ্গল কাব্য।
২) অনুবাদ সাহিত্যঃ
উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম হচ্ছে রামায়ণ, মহাভারত, ভগবত ইত্যাদি।
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যর প্রধান দুটি শাখা হল — ১.কাহিনীমূলক ও ২.গীতিমূলক।
মঙ্গল কাব্য:
মঙ্গল কাব্যের কয়েকজন বিখ্যাত কবি- কানাহরি দত্ত, নারায়ন দেব, বিজয়গুপ্ত, বিপ্রদাস পিপলাই, মাধব আচার্য, মুকুন্দরাম চক্রবর্তী,ঘনরাম চক্রবর্তী, শ্রীশ্যাম পন্ডিত, ভরতচন্দ্র রায় গুনাকর, ক্ষেমানন্দ, কেতকা দাস ক্ষেমানন্দ, দ্বিজ মাধব, আদি রূপরাম, মানিক রাম, ময়ূর ভট্ট, খেলারাম, রূপরাম, সীতারাম দাস, শ্যামপন্ডিত, দ্বিজ বংশী দাস, দ্বিজ প্রভারাম।
বিভিন্ন দেবদেবীর গুনগান মঙ্গল কাব্যর উপজীব্য। তন্মধ্যে স্ত্রী দেবীদের প্রধান্যই বেশী এবং মনসা ও চন্ডীই এদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুররত্বপূর্ণ।
মঙ্গল কাব্য প্রধানত দু’প্রকার। যথা- (ক) পৌরাণিক মঙ্গল কাব্য ও (খ) লৌকিক মঙ্গল কাব্য।
পৌরাণিক মঙ্গল কাব্য -অন্নদামঙ্গল, কমলামঙ্গল, দূর্গামঙ্গল।
উল্লেখযোগ্য লৌকিক মঙ্গল কাব্য- মনসা মঙ্গল, চন্ডীমঙ্গল, কালিমঙ্গল, গৌরীমঙ্গল (বিদ্যাসুন্দরী), সারদামঙ্গল প্রভৃতি।
মনসামঙ্গল
সর্বাপেক্ষা প্রাচীনতম মঙ্গল কাব্য ধারা –মনসামঙ্গল
সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় মনসামঙ্গল কাহিনী চাঁদ সাগরের বিদ্রোহ ও বেহুলার সতীত্ব কাহিনী।
মনসামঙ্গল কাব্য দেবী মানসা’র কাহিনী নিয়ে রচিত
মনসামঙ্গলের উল্লেখযোগ্য চরিত্র- মনসাদেবী, চাঁদ সুন্দর, বেহুলা, লক্ষ্মীন্দর
আদি কবি কানা হরিদত্ত।
মনসা মঙ্গল কাব্য রচিত হয় সুলতান হুসেন শাহের সময়ে।
মনসামঙ্গলের অন্যতম কবি নারায়ন দেবের জন্মস্থান বর্তমান কিশোরগঞ্জ ও তাঁর কাব্যের নাম পদ্মপুরাণ
মনসামঙ্গলের অন্যতম কবি বিজয় গুপ্তের জন্ম স্থান বরিশাল জেলার বর্তমান গৈলা গ্রামে এবং প্রাচীন নাম ফুলশ্রী।
‘মনসা বিজয়’ কাব্যগ্রন্থের রচিয়তা বিপ্রদাস পিপিলাই, ১৪৯৫ সালে প্রকাশিত হয়।
দ্বিজ বংশীদাস
মনসামঙ্গলের সুকণ্ঠ গায়ক হিসেবে দ্বিজ বংশীদাস এর বিশেষ খ্যাতি ছিল
দ্বিজ বংশীদাস জন্মগ্রহন করেন কিশোরগঞ্জ জেলার পাতুয়ারী গ্রামে।
মনসামঙ্গলের অন্যতম শ্রেষ্ঠচন্ডীমঙ্গল কাব্য
চন্ডীমঙ্গল কাব্যের আদি কবির নাম মানিক দত্ত।
ষোড়শ শতকে চন্ডীমঙ্গল কাব্যর সর্বাধিক প্রসার ঘটে
চন্ডীমঙ্গল কাব্যর রচনাকাল ষোড়শ থেকে আঠার শতক পর্যন্ত বিস্তৃত
চন্ডীমঙ্গল কাব্য ধারার সর্বশ্রেষ্ট কবি কবি কবিকঙ্কন মুকুন্দ রাম চক্রবর্তী
কবি মুকুন্দ রাম জন্মগ্রহন করেন বর্ধমান জেলার দামুন্যা গ্রামে
মুকুন্দ রাম সভাসদ ছিলেন মেদিনীপুর জেলার অড়বা গ্রামের জমিদার রঘুনাথের।
মুকুন্দ রামকে ‘কবিকঙ্কন’ উপাধি দেন জমিদার রঘুনাথ শ্রী শ্রী চন্ডীমঙ্গল কাব্য রচনার জন্য।
মুকুন্দ রামের চন্ডীমঙ্গল কাব্যর অন্যান্য নাম অভয়ামঙ্গল, অধিকামঙ্গল, গৌরিমঙ্গল, চন্ডীমঙ্গল প্রভৃতি।
উল্লেখ্যযোগ্য কবির নাম দ্বিজ রামদেব, মুক্তারাম সেন, হরিরাম, ভবানীশঙ্কর দাস, অকিঞ্চন চক্রবর্তী প্রমুখ।
ধর্মমঙ্গল কাব্য
ধর্মমঙ্গল কাব্যের কাহিনী দুটি। যথাঃ (ক) রাজা হরিশ্চন্দ্রের কাহিনী এবং (খ) লাউসেনের কাহিনী।. ধর্মমঙ্গল কাব্যের আদি কবি ময়ূর ভট্ট।
‘হাকন্দপুরান’ ময়ূর ভট্ট রচিত কাব্য গ্রন্থ।
শ্যাম পন্ডিত ধর্মমঙ্গলের অন্যতম কবি ছিলেন
নিরঞ্জন মঙ্গল শ্যাম পন্ডিত এর কাব্য গ্রন্থের নাম
সা’ বারিদ খান রচিত মঙ্গল কাব্যর নাম বিদ্যাসুন্দর
কবিরঞ্জন’ রাম প্রসাদ সেন এর উপাধি, রাম প্রসাদ সেনকে ‘কবিরঞ্জন’ উপাধি প্রদান করেন নবদ্বীপের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র।রাম প্রসাদ সেনের কাব্য গ্রন্থের নাম কবিরঞ্জন
কবি ক্ষেমানন্দের উপাধি ছিল কেতকা দাস।
ভারতচন্দ্র রায়
অষ্টাদশ শতকের শ্রেষ্ট কবি এবং মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে সুপরিচিত ভারতচন্দ্র রায় গুনাকর।
অন্নদামঙ্গল কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা ভারতচন্দ্র রায় গুনাকর।
ভারতচন্দ্র ‘রায় গুণাকর’ উপাধি প্রদান করেন নবদ্বীপের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র।
ভারতচন্দ্র সভাকবি ছিলেন নবদ্বীপের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র।
ভারতচন্দ্রের রায় রচিত মঙ্গল কাব্যর নাম অন্নদামঙ্গল কাব্য।
ভারতচন্দ্র রায় গুণাকরের জন্মস্থান হাওড়া জেলার পেঁড়ো (পান্তুয়া) গ্রামে।
কবি ভারত চন্দ্র রায় গুনাকর জীবানাবসানের মাধ্যমে মধ্যযুগের অবসান হয়েছে।
লোকসাহিত্য
বাংলা সাহিত্যের শেকড় সন্ধানী সাহিত্য লোকসাহিত্য
লোক সাহিত্যের প্রাচীনতম সৃস্টি ছড়া ও ধাঁ ধাঁ. ‘মহুয়া পালা’ বেদের এক অপূর্ব সুন্দরী কন্যা মহুয়ার সাথে বামনকান্দার জমিদার ব্রাহ্মন যুবক নদের চাঁদের প্রনয় কাহিনী নিয়ে রচিত।
মৈয়মনসিংহ গীতিকা
বাংলাদেশ থেকে সংগৃহিত লোক গীতিকা ৩ ভাগে বিভক্ত -নাথ-গীতিকা, মৈয়মনসিংহ গীতিকা ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা
মৈয়মনসিংহ গীতিকার অর্ন্তগত উল্লেখযোগ্য গীতিকাগুলো মহুয়া, চন্দ্রাবতী, কাজল রেখা, দেওয়ানা মদিনা প্রভৃতি।
‘দেওয়ানা মদিনা’ পালাটির রচয়িতা মনসুর বয়াতি।
মৈয়মনসিংহ গীতিকা বিশ্বের ২৩ টি ভাষায় অনুদিত হয়েছে
গীতিকার রচয়িতা ড. দীনেশ চন্দ্র সেন
মৈয়সনসিংহ গীতিকা ১৯২৩ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়
আরো জেনে রাখুন
মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের মুসলমান কবিগণের সর্বাপেক্ষা উল্লেখ্যযোগ্য অবদান রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান।
মধ্যযুগে ফারসি ভাষা থেকে অনুদিত প্রণয়োপাখ্যানগুলো হল ইউসুফ-জুলেখা, লাইলী-মজনু, গুলে বকাওয়ালী, সয়-ফুলমুলুক বদিউজ্জামাল, সপ্তপয়কর ইত্যাদি।
মধ্যযুগে হিন্দী ভাষা থেকে অনুদিত প্রণয়োপাখ্যানগুলো হল পদ্মাবতী, সতী ময়না লোরচন্দ্রনী, মধুমালতী, মৃগাবতী ইত্যাদি।
‘গুলে বকাওয়ালী’ রচনা করেন নওয়াজিশ আলী খান।
সয়ফুলমুলুক বদিউজ্জামাল কাব্যের কাহিনী আরবিয় উপন্যাস বা আলেফ লায়লা।
সয়ফুলমুলুক বদিউজ্জামাল’ রচনা করেন আলাওল।
সপ্তপয়কর পারস্যর কবি নিজামী গঞ্জভীর সপ্তপয়কর রচনার ভাবানুবাদ।
লাইলী মজনু বাহরাম খান রচনা করেন।
ইউসুফ-জুলেখা শাহ মুহম্মদ সগীর রচনা করেন।
‘ইউসুফ-জুলেখা’ আরো রচনা করেন – আব্দুল হাকিম, গরীবুল্লাহ, গোলাম সাফাতউল্লাহ, সাদেক আলী ও ফকির মুহাম্মদ।
মর্সিয়া সাহিত্য এক ধরনের শোককাব্য। বাংলা সাহিত্যে মর্সিয়া সাহিত্য ধারার প্রথম কবি শেখ ফয়জুল্লাহ এবং তাঁর কাব্যের নাম জয়নবের চৌতিশা।