ইসবগুল ও তোকমা দানা খাওয়ার নিয়ম
ইসবগুল ও তোকমা দানা খাওয়ার নিয়ম: ইসুবগুল শুকনো কিংবা পানিতে ভিজিয়ে খেতে পারেন । এর কোন প্রকার পাশ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে তোকমা দানা খেতে আপনাকে একটি নিয়ম মেনেই চলতে হবে তা হচ্ছে খাওয়ার আগে তোকমা দানা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তোকমা দানা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে তা ফুলিয়ে কালো বীজ ভাতে মত সাদা হয় এবং ফুলিয়ে বড় হলে তা শরবতের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন.
ইসবগুল ও তোকমা দানা খাওয়ার নিয়ম
আমরা সকলেই ইসবগুল ও তোকমা খাওয়া উপকারিতা সম্পর্কে কমবেশি জেনে থাকি। কিন্তু এই ইসবগুল ও তোকমা দানা খাওয়ার নিয়ম অনেকেই জানি না। তাই আপনারা যারা ইসবগুল ও তোকমা দানা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান তাদের জন্য এই আর্টিকেলটি আমরা তৈরি করেছি।
যাতে করে আপনারা খুব সহজেই ইসবগুল ও তোকমা দানা খাওয়ার নিয়ম জানতে পারেন এবং এর উপকারিতা সম্পর্কে অবগত হয়ে নিয়মিত সেবন করে নিজেদের শারীরিক সমস্যা দূর করতে পারেন। চলুন তাহলে জেনে নেই ইসবগুল ও তোকমা দানা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
ইসবগুল কি?
হিসেবগুলো শব্দটি এসেছে ফরাসি শব্দ “ইসপা-গুল” থেকে। আর এর অর্থ “ঘোড়ার কান”। ইসবগুল দেখতে খুব ছোট হলেও এর খোসা গুলো শত শত গুণ বড় করে দেখলে অনেকটা ঘোড়ার কানের মত দেখতে হয়। কিন্তু এই ইসবগুল বাংলায় উচ্চারণগত হবে “ইশবগুল” এবং বানানে “ইসবগুল” হয়ে থাকে।
বিদেশি বাজারগুলোতে ইসবগুল কে “সিলিয়াম হাস্ক” হিসেবে চিনে থাকে। এক প্রকার উদ্ভিদ এর বীজের খোসা কে ইসুবগুল হিসেবে গণ্য করা হয়। আর এরই সবগুলো আদি বাসভূমি ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে বেশি পাওয়া যায়। আর সে সকল দেশগুলো থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশে এসে পৌঁছায় এই উপকারী এক প্রকার ঔষধ।
ইসবগুল এর উপকারিতা
ইসুবগুলের ভুষিতে অনেক উপকার রয়েছে। আর এর প্রধান উপকার হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য। এছাড়াও শরীরের নানা ধরনের সমস্যা, খাদ্য করুন দীর্ঘ যাত্রার বহুক্ষণ, একই স্থান থেকে বসে থাকা এবং গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য ইসবগুলের ভুষি খাওয়া হয়। ইসবগুলের উপকারিতা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ-
কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ:
ইসবগুলের ভুষি মূলত কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করে। এটি সেবন করলে অদ্রবণীয় ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীদের মল নরম করে দেয় এবং খুব সহজেই ইলিমিনেশন সম্ভব করে।
তাই যাদের এই ধরনের সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন ঘুমানোর আগে দু চা-চামচ ইসুবগুলের ভুষি এক গ্লাস গরম দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। ইসুবগুলের ভুষি এবং গরম দুধ একসাথে মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেখে পান করতে হয়।
তবে যারা এ ধরনের রোগে অবহেলা করেন তাদের জন্য ভবিষ্যতে বড় কোন রোগের লক্ষণ অপেক্ষা করে আছে। মূলত যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থাকে তারা যদি অবহেলা করে থাকেন তাহলে যে কোন সময় তাদের কোলন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধ:
কিছু মানুষ আছে যাদের প্রায় ডায়রিয়া রোগে ভোগে থাকেন। কিছুদিন পর পর তাদের ডায়রিয়া হয়ে থাকে। আর এই ডায়রিয়া রোগীদের টনিক হলো ইসুবগুলের ভুষি ও দই। এ দুটি উপকরণ একসাথে মিশিয়ে সেবন করলে ডায়রিয়া রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ঘনঘন যাদের ডায়রিয়া হয়ে থাকে তাদের জন্য এটি খুব উপকার নিয়ে আসে। তবে যারা এই ডায়রিয়া রোগকে অবহেলা করবেন তারা ডিহাইড্রেশন ভুগতে পারেন।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ:
বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগীর পরিমাণ অনেক বেশি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এই ডায়াবেটিকস বৃদ্ধি পাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে অধিক পরিমাণে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া। আর তার জন্য ইসবগুলের ভুষি অন্যতম ভূমিকা পালন করে।
কারণ ইসবগুলে রয়েছে জিলেটিন নামক উপাদান। এটি রক্তের গ্লুকোজের শোষণ ও ভাঙ্গড় প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে থাকে। যার ফলে রক্তে সুগারের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় না। সুতরাং নিয়মিত পানির সাথে ইসুবগুলের ভুষি মিশ্রিত করে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
রক্তে কোলেস্টেরল হ্রাস:
নিয়মিত ইসবগুল এর ভুসি সেবন করলে আমাদের অন্ত্রে এক ধরনের স্তর তৈরি হয়। আর এই স্তরটি শোষণে বাধা তৈরি করে। তাই রক্তের কোলেস্টরলের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রায় রাখতে চাইলে নিয়মিত ইসবগুলের ভুষি সেবন করা উচিত। এছাড়াও যারা হৃদরোগে আক্রান্ত তাদের জন্য এটি খুব ভালো কাজ করে।
গ্যাসটিক হ্রাস:
যাদের প্রচুর পরিমাণে গ্যাস্টিকের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত ইসুবগুলের ভুষি সেবন করলে গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তির পাবেন। ইসুবগুলের ভুসিতে রয়েছে ফাইবার যা পাকস্থলীর একটি স্তর তৈরি করে থাকে। আর এই স্তরটি অ্যাসিডিটির হাত থেকে রক্ষা করে।
এছাড়াও ইসুবগুলের ভুষি হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে থাকে।
ইসবগুল খাওয়ার নিয়ম
ইসবগুল খাওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নিয়ম নেই। তবে আপনারা যে কোন খাবারের সাথে ইসবগুলের ভুষি মিশিয়ে খেতে পারবেন না। যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য ইসুবগুলের ভুষি পানির সাথে মিশিয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে সেবন করলে সে সমস্যার সমাধান পাওয়া।
এছাড়াও আপনারা পানির পরিবর্তে হালকা কুসুম গরম দুধের সাথে মিশিয়ে ইসবগুলের ভুষি সেবন করতে পারেন। কোষ্ঠকাঠিন্য গ্যাস্ট্রিক এবং যেকোন সমস্যার প্রতিদিন সকাল বেলা এক গ্লাস পানির সাথে বা দুধের সাথে ২ চা চামচ ইসবগুল দিয়ে ভিজিয়ে খেলে খুব সহজে তা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
তোকমা কি?
তোকমা বা তোকমার দানা শরবত একটি জনপ্রিয় পানীয়। দক্ষিণ এশীয় এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এ পানির চাহিদা অধিক পরিমাণে রয়েছে। তাছাড়াও রমজান মাসে এই তোকমার চাহিদা দ্বিগুণ পরিমাণে বৃদ্ধি পায়।
তোকমা শব্দটি হচ্ছে বাংলা শব্দ। এটিকে ইংরেজিতে Basil seed, tukmaria seeds, sabja seeds বলা হয়। চাষ করা হয় দক্ষিণ এশীয় দেশ গুলোতে। তোকমা দেখতে কালো এবং অনেকটা লম্বা এবং গোলাকার।
তোমাতে রয়েছে ৪২% কার্বোহাইড্রেট, ২০% প্রোটিন, ২৫% ফ্যাট (প্রায়) এবং প্রচুর পরিমাণ ফাইবার, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, তামা, ম্যাঙ্গানিজ ও ভিটামিন সি।
তোকমা দানার উপকারিতা
তোকমা দানা সেবন করার অনেক উপকারিতা রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু উপকার আমরা নিম্নে উল্লেখ করছি।
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ:
রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে তোকমা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। মূলত তোকমা খেলে দেহের বিপাক ক্রিয়া করে দেয়। যার ফলে কার্বোহাইড্রেট কে গ্লুকোজে রূপান্তরিত করতে সহজ হয়। এছাড়া যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য খুব উপকারে আসে।
এ ধরনের সমস্যার সমাধানের জন্য নিয়মিত তোকমার শরবত সেবন করতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর:
যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য বিশেষ উপকারে আসে। মূলত হজমের সমস্যা কারণে এ ধরনের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। আর কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা কি প্রশ্রয় দিলে ভবিষ্যতে কোলন ক্যান্সার নামক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই অবহেলা না করে দ্রুত কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তোকমা খেতে পারেন।
এক গ্লাস পানি অথবা একগ্লাস কুসুম দুধের সাথে তোকমা ভিজিয়ে রেখে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর এটি সেবন করলে এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে এটি একদিন বা দুদিন সেবন করলে চলবেনা প্রতিদিন সেবন করতে হবে।
এসিডিটি হ্রাস:
যাদের এসিডিটির সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য অন্যতম ভূমিকা পালন করে তোকমা। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে তোকমা শরবত খেলে পেটের জালাপোড়া দুর হয় এবং এসিডিটির সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আসে।
ওজন হ্রাস:
যাদের ওজন বেশি এবং নিজেদের ওজন নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন তাদের জন্য তোকমার শরবত খুবই উপকারী। কারণ রয়েছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড। যা দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই প্রতিদিন পানিতে ভিজিয়ে রেখে পান করলে ওজন দ্রুত কমে যায়। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ যা বাড়তি চর্বি দূর করে এবং পেট দীর্ঘক্ষন পরিপূর্ণ করে রাখে।
ত্বক ও চুল:
আমরা সকলেই ত্বক এবং চুলের ওপর বিশেষ নজর দিয়ে থাকিক। কারণ এই ত্বক এবং চুলের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। আর এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা যদি প্রতিদিন নিয়মিত এক গ্লাস তোকমার শরবত সেবন করি তাহলে আমাদের ত্বক এবং চুল সুস্থ থাকবে।
তোকমা দানা খাওয়ার সতর্কতা
গর্ভবর্তী নারীদের দেহে ইস্ট্রোজেন হরমোন কমিয়ে দিতে পারে তোকমা দানা । তাই গর্ভবর্তী নারী ও শিশুদের তোকমা দানা খাওয়া উচিৎ নয়। পানিতে ভাল করে ভিজিয়ে না রেখে খেলেও তোকমা দানা পেটে ফুলিয়ে যেতে পারে। এতে মারাত্বক পাশ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, এমনকি শিশুদের শ্বাসরোধও হতে পারে। যারা তোকমা দানা খাবেন পানিতে কমপক্ষে ৫/৬ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। তারপর শরবতের সাথে খেয়ে ফেলুন।
ইসবগুল ও তোকমা দানা খাওয়ার নিয়ম
উপরে আমরা ইসুবগুল ও তোকমা দানার অনেক উপকারিতা জেনেছি। এখন জানবো খাওয়ার নিয়ম। ইসুবগুল শুকনো কিংবা পানিতে ভিজিয়ে খেতে পারেন । এর কোন প্রকার পাশ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে তোকমা দানা খেতে আপনাকে একটি নিয়ম মেনেই চলতে হবে তা হচ্ছে খাওয়ার আগে তোকমা দানা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
তোকমা দানা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে তা ফুলিয়ে কালো বীজ ভাতে মত সাদা হয় এবং ফুলিয়ে বড় হলে তা শরবতের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
আশা করি ইসবগুল ও তোকমা দানা খাওয়ার নিয়ম, এর সুবিধা ও সাবধানতা সম্পর্কে ভাল ধরণা পেয়েছেন। এগুলো খুবই উপকারি, তবে ঠিকমত ব্যবহার করতে না পারলে কিছু অসুবিধা হতে পারে। তাই সঠিক নিয়মে গ্রহন করার মাধ্যমে অসুবিধাগুলোকে এড়িয়ে প্রকৃত কার্যকারিতা পাওয়া সম্ভব।