Study

দৈনন্দিন জীবনে বার বার ব্যবহৃত শব্দ ও তার উৎপত্তি

ADX Ads

দৈনন্দিন জীবনে বার বার ব্যবহৃত শব্দ ও তার উৎপত্তি

উৎপত্তিগত দিক থেকে শব্দের উদাহরণসহ শ্রেনীবিন্যাস আলোচনা:

হাজার বছরের ভাষা বাংলা। বিবর্তনের নানা পর্যায় অতিক্রম করে এ ভাষা আজকের রূপে বিকাশলাভ করেছে। এ ভাষা বিকাশ ও বিবর্তনের ধারায় এসে মিশেছে বিভিন্ন ভাষায় শব্দাবলি। কালের বিবর্তনে সে সব শব্দ আজ বাংলা ভাষার নিজের হয়ে গেছে। তবে ব্যূৎপত্তি বিশ্লেষণে সে সব শব্দকে তার মূল পরিচয়েই চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। সে বিবেচনায় উৎপত্তিগত দিক থেকে বাংলা ভাষার শব্দ সমূহকে ৫ (পাঁচ) শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। যথা:

১. তৎসম শব্দ

২. অর্ধতৎসম শব্দ

৩. তদ্ভব শব্দ

৪. দেশি শব্দ

৫. বিদেশি শব্দ

তৎসম শব্দ : ‘তৎ’ অর্থ তার এবং ‘সম’ অর্থ মত অর্থাৎ তার মত। তবে তৎসম শব্দটি ‘সংস্কৃত ভাষার শব্দের মত’ অর্থে ব্যবহৃত। সুতরাং, সংস্কৃত ভাষার যে সব শব্দ বাংলা ভাষায় অবিকলভাবে ব্যবহৃত হয়, সে সব শব্দই তৎসম শব্দ। যেমন: গৃহ, সূর্য, বৃক্ষ, হস্ত, মহোৎসব, চন্দ্র, রাত্রি, নিমন্ত্রণ প্রভৃতি।

অর্ধতৎসম শব্দ : সংস্কৃত ভাষার যে সব শব্দ প্রধানত উচ্চারণ বিকৃতির কারণে কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় প্রচলিত, সে সব শব্দকে অর্ধতৎসম শব্দ বলে। যেমন: মোচ্ছব, গেহ, সুরুজ, পরান, পেন্নাম, নেমন্তন্ন, জোছনা, পুব প্রভৃতি।

        এখানে ‘মোচ্ছব’ শব্দটি ‘মহোৎসব’, ‘গেহ’ ‘গৃহ’, ‘সুরুজ’ শব্দটি ‘সূর্য’, ‘পরান’ শব্দটি ‘প্রাণ’, ‘পেন্নাম’ শব্দটি ‘প্রনাম’, ‘নেমন্তন্ন’ শব্দটি ‘নিমন্ত্রণ’, ‘জোছনা’ শব্দটি ‘জ্যোৎস্না’ এবং ‘পুর্ব’ শব্দটি ‘পূর্ব’ সংস্কৃত শব্দ থেকে উচ্চারণ বিকৃত হয়ে বাংলায় প্রচলিত। শব্দ ও তার উৎপত্তি

     3. তদ্ভব শব্দ : সংস্কৃত ভাষার যে সব শব্দ প্রাকৃত পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে প্রধানত উচ্চারণ বিকৃত হয়ে বাংলায় এসেছে, সে গুলোকে তদ্ভব শব্দ বলা হয়। যেমন:

(তৎসম=>প্রাকৃত=>তদ্ভব)

হস্ত=>হত্থ=>হাত;

কার্য্য=>কজ্জ=>কাজ;

বধূ=>বহু=>বউ;

পাদ=>পাঅ=>পা

তদ্ভব শব্দ প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষার আদি স্তর বৈদিক ও সংস্কৃত ভাষার বিবর্তিত রূপ। এ সব শব্দই বাংলা ভাষা উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করেছে এবং এ সব শব্দই বাংলা ভাষার মূল বা নিজ শব্দ হিসেবে বিবেচিত। বাংলা তদ্ভব শব্দের ব্যবহারও সবচেয়ে বেশি। ড. এনামুল হক মনে করেন যে, বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত শতকরা ৬০ ভাগ শব্দ তদ্ভব শব্দ যা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত।

কিছু তদ্ভব শব্দের তালিকা নিচে দেওয়া হল:

 চোখ, কান, মা, বাপ, ভাই, বোন, মামা, জেঠা, গরু, গোয়ালা, ঘোড়া, উট, কামার, কুমার, হাতি, গাধা, সাপ, আম, ছাতা, সোনা, রূপা, তামা, ছাতা, বাতি, লাঠি, এক, দুই, তিন, পোয়া, সাড়ে, দেগ, আধ, পাঁচই, কাল, আজ, মৌ, হালকা, পাতলা, তুমি, তিনি, নাচ, ভাল । শব্দ ও তার উৎপত্তি

 দৈনন্দিন জীবনে বার বার ব্যবহৃত শব্দ ও তার উৎপত্তি

১। হাত, পা , কান, মাথা >> তদ্ভব শব্দ
২। কলম ,ইমন, ইশারা , খবর >> আরবি ।
৩। আব্বু > উর্দু , বাবা > তুর্কি , বাপ > দেশি
৪। আম্মু > উর্দু , মা > তদ্ভব ,
৫। দাদা – দাদি, চাচা- চাচি , ফুফা-ফুফি , দুলা ,বেটা,পানি, ঝামেলা, ঠিকানা, জায়গা , জিলাপি , চানাচুর , ডালপুরি >>> হিন্দি
৬। চন্দ্র , সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র , স্বামী , পুত্র , খাদ্য >> তত্সম

৭। বেগম,বিবি, খাতুন, চাকু, কাঁচি,বন্দুক, খোকা ,বাবুর্চি, উজবুক, , কোর্মা > তুর্কি
৮। পেঁপে , আনারস, পাউরুটি , আচার , চাবি, বালতি,গামলা, জানালা , সাবান, তোয়ালে , টুপি, ফিতা,কামিজ, সেমিজ, আলপিন , মাইরি > পর্তুগিজ।
৯। রিক্সা, ক্যারাটে , হাসনাহেনা , হারিকিরি >>> জাপানি
১০। চা, চিনি, লিচু, লুচি >>>>>> চীনা
১১। দাম , সেমাই, সুড়ঙ্গ, কেন্দ্র >>>> গ্রীক
১২। লুঙ্গি , ফুঙ্গি > বর্মি

১৩। কুপন, কাফে, রেস্তরা , রেনেসাঁস,েআঁতাত > ফরাসি ।
১৪। চকোলেট > মেক্সিকান
১৫। হরতাল,খদ্দর >>> গুজরাটি
১৬। পেট,ঢেঁকি,চুলা, কুলা, আলু, ডাব, ডাগর , ঝোল, ঢেউ, টোপর, গঞ্জ , ডিঙ্গা, ডিঙ্গি , ঢিল, চোঙ্গা >> দেশি শব্দ
১৭। ম্যাজেন্টা , মাফিয়া >> ইতালি ।
১৮। রোয়ানু >> দিভেহী ( মালদ্বীপ)

১৯। তদ্ভব শব্দের কিছু উদাহরণঃ গোয়াল, গরু, ঘোড়া, উট, হাতি, গাধা, সাপ, সোনা, রুপা, আম, ছাতা, লাঠি, বাতি, চোখ, কান, এক, দুই, তিন, পোয়া, সাড়ে, দেড়, আধ, মা, বাপ, ভাই, বোন, মামা, জ্যাঠা, কামার, বাঁদর, ভাত, , মেয়ে, , মাস, . শিউলি, কুমার, পয়লা, দোসরা, পাঁচই, আমি, তুমি, তিনি, চলে, হয়, নাচে, কাল, ভালো, হালকা, পাতলা, বাছুর, , আজ, আলতা, আটপৌরে, দেউলিয়া, দেউটি, উনুন, এয়ো, ওঝা, চিড়া, ছুতা, ছাতা, জট, ঝি ইত্যাদি। শব্দ ও তার উৎপত্তি

মিশ্র শব্দ

ডাক্তারখানা (ইংরেজি + ফরাসি)
হেড মৌলভী (ইংরেজি+ফারসি)
হেড মাস্টার (ইংরেজি+ইংরেজি)
খ্রিস্টাব্দ (ইংরেজি+তৎসম)
মাস্টার মশাই (ইংরেজি+তদ্ভব)
পকেটমার (ইংরেজি+বাংলা)
বোমাবাজ (পর্তুগিজ+ফরাসি)
শাকসবজি (তৎসম+ফারসি)
হাটবাজার (বাংলা+ফরাসি)
রাজাবাদশা (তৎসম+ফরাসি)
আইনজীবি (ফরাসি+তৎসম)
চৌহদ্দি (ফারসি+আরবি)
কালিকলম (বাংলা+আরবি)

টেকনিকে মিশ্র শব্দঃ

রাজা বাদশারা তাদের খ্রিস্টাব্দে
হেড মৌলভী, হেড পন্ডিতদের খুব সম্মান
করতেন। সেই সময় পকেটমাররা,
ডাক্তারখানা, হাটবাজারের
চৌহ্দ্দিতে ঘোরাফেরা

যৌগিক শব্দঃ

টেকনিক >> >>মিতালি মধুর পড়ুয়া গায়ক কর্তব্য না করে বাবুয়ানা ভাব করে দৌহিত্রকে নিয়ে সাংবাদিকের সাথে চিকামারে।
ব্যাখ্যাঃ মিতালি, মধুর, পড়ুয়া, গায়ক, কর্তব্য, বাবুয়ানা, দৌহিত্র, সাংবাদিক, চিকামারা।

রূঢ়ি শব্দঃ

টেকনিক >> >> তৈলে ভাজা সন্দেশ খেয়ে এক প্রবীণ পাঞ্জাবী পড়ে গবেষণা করে হস্তীর পিঠে চড়ে দারুণ বাঁশি বাজায়।
ব্যাখ্যাঃ তৈল, সন্দেশ, প্রবীণ, পাঞ্জাবী, গবেষণা, হস্তী, দারুণ, বাশি।

দৈনন্দিন জীবনে বার বার ব্যবহৃত শব্দ ও তার উৎপত্তি

যোগরূঢ় শব্দঃ

টেকনিক >> >>রাজপুত পঙ্কজ তুরঙ্গমে চড়ে মহাযাত্রায় গিয়ে জলধির নিকট আদিত্যের সাথে দণ্ডবৎ হয়ে রইল।
ব্যাখ্যাঃ রাজপুত, পঙ্কজ, তুরঙ্গম, মহাযাত্রা, জলধি, আদিত্য, দণ্ডবৎ।শব্দ ও তার উৎপত্তি

পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ

‪#‎কতগুলো শব্দ কেবল পুরুষ বোঝায়—
→ কবিরাজ, ঢাকী, কৃতদার, অকৃতদার, রাষ্ট্রপতি।
#কতগুলো শব্দ পুরুষ ও স্ত্রী দু-ই বোঝায়—
→ গুরু, শিশু, সন্তান, জন, শিক্ষিত, পাখি।
‪#‎নারীকে সম্বোধনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে—
→ শ্রদ্ধাস্পদাসু
‪#‎লিঙ্গান্তর হয় না এমন শব্দ —
→ কবিরাজ, কেরানী ,রাষ্ট্রপতি, ডাক্তার ।
#কতগুলো নিত্য স্ত্রীবাচক শব্দ —
→ শাঁকচুন্নী, সধবা, সতীন, সপত্নী, বিধবা, সধবা, ডাইনি, কুলটা এয়ো, দাই।
‪#‎দুটি পুরুষবাচক শব্দ রয়েছে —
→ ননদ

আরও পড়ুন

শব্দ ও তার উৎপত্তি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also
Close
Back to top button