ল. সা. গু ও গ. সা. গু নিয়ে অজনা তথ্য
ল. সা. গু ও গ. সা. গু নিয়ে অজনা তথ্য
প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা বরাবরের মতো অত্যান্ত সাধরণ একটি বিষয় নিয়ে লিখতে বসলাম। এই যুগে গ.সা.গু. ও ল.সা.গু. পারে না এমন কেই বা আছে। তবুও যাদের মধ্যে সামান্যতমও সন্ধেহ বা এই বিষয়ে জানার আগ্রহ শুধু তাদের জন্য আজকের পোষ্ট।
গ.সা.গু নির্ণয়
গ.সা.গু. (গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক):
দুই বা ততোধিক সংখ্যার ১ বা একাধিক সাধারণ উৎপাদক থাকলে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় উৎপাদক বা গুণনীয়ককে প্রদত্ত সংখ্যাগুলোর গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক (সংক্ষেপে গ. সা. গু.) বলা হয়। ইংরেজীতে Greatest common divisor বলে।
উদাহরণ:-১। ২৪ ও ৩৬ এর গ. সা. গু. নির্ণয়-
১ম পদ্ধতি
গ.সা.গু বের করার নিয়মঃ
i. প্রথমত সংখ্যা গুলোর মৌলিক গুণনীয়ক গুলো বের করতে হবে ।
ii. তারপর সংখ্যা গুলোর সাধারণ মৌলিক গুণনীয়কই হবে নির্ণেয় গসাগু।
যেমনঃ ১৬ ও ১২ এর গ.সা.গু হলঃ
২৪ = ৩x২x ২ x ২
১২ = ৩x২x২
সুতরাং, নির্ণেয় গসাগু= ৩x২x২=১২।
২য় পদ্ধতি
সংখ্যা দুইটির সাধারণ মৌলিক গুণনীয়কগুলো বের করি।
- ২৪-এর সকল মৌলিক গুণনীয়ক: ২৪ = ২x২x২x৩
- ৩৬-এর সকল মৌলিক গুণনীয়ক: ৩৬ = ২x২x৩x৩
সংখ্যাদ্বয়ের সাধারণ (কমন) মৌলিক গুণনীয়কগুলো হলো- ২, ২ ও ৩ এবং এদের গুণফল= ২x২x৩= ১২
সুতরাং ২৪ ও ৩৬ এর গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক বা গ. সা. গু. ১২।
সংখ্যার মৌলিক উৎপাদক বের করার পদ্ধতিঃ
বিভাজ্যতার সূত্রঃ কোন সংখ্যাকে কোন সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যাবে?
উদাহরণ:-২। ১৮, ২৪ ও ৩০ এর গ.সা.গু. নির্ণয় কর।
- ১৮ এর সকল মৌলিক গুণনীয়ক: ১৮ = ২x৩x৩
- ২৪ এর সকল মৌলিক গুণনীয়ক: ২৪ = ২x২x২x৩
- ৩০ এর সকল মৌলিক গুণনীয়ক: ৩০ = ২x৩x৫
সংখ্যাগুলোর সাধারণ (কমন) মৌলিক গুণনীয়কগুলো হলো ২ ও ৩ এবং এদের গুণফল = ২x৩=৬
সুতরাং ১৮, ২৪ ও ৩৬ এর গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক বা গ.সা.গু. ৬।
৩য় পদ্ধতি
ভাগ প্রক্রিয়ায় গ.সা.গু নির্ণয়:
উদাহরণ ১। ১৮, ২৪ এবং ৩০ এর গ. সা. গু. নির্ণয় কর।
সমাধান:
অংক এবং সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য কি?
এখানে, শেষ ভাজক ৬, যা ২৪ ও ৩০ এর গ. সা. গু.
∴ ১৮, ২৪ ও ৩০ এর গ. সা. গু. ৬।
স্মরণীয়ঃ
- একাধিক সংখ্যার সাধারণ গুণনীয়কগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়টি তাদের গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক (গ, সা. গু.)
- একাধিক সংখ্যার গ. সা. গু. = এদের সাধারণ মৌলিক গুণনীয়কগুলোর গুণফল।
- সংখ্যাগুলোর কোনো সাধারণ মৌলিক গুণনীয়ক না থাকলে তাদের গ. সা. গু. ১।
- গুণনীয়কের অপর নাম উৎপাদক।
ল.সা.গু নির্ণয়
ল. সা. গু. (লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক): দুই বা ততোধিক সংখ্যার ক্ষুদ্রতম সাধারণ গুণিতককে উহাদের ল. সা. গু বলে। ইংরেজীতে Least common multiple বলে।
উদাহরণ:-১। ২৪ ও ৩৬ এর ল.সা.গু. নির্ণয়
১ম পদ্ধতি
লসাগু বের করার নিয়মঃ
i. প্রথমত সংখ্যা গুলোর মৌলিক গুণনীয়ক গুলো লেখি।
ii. তারপর মৌলিক গুণনীয়ক গুলি হতে প্রত্যেকটি সর্বোচ্চ কত বার আছে তা নিয়ে গুন ফল হল নির্ণেয় ল.সা.গু ।
২৪ ও ৩৬ এর মৌলিক গুণনীয়ক গুলো হলঃ
২৪ = ৩ x২x ২ x২
৩৬ = ৩ x৩ x২x২x২
এখানে, ৩ সর্বোচ্চ দুইবার এবং ২ সর্বোচ্চ ৩ বার আছে ।
অর্থাৎ নির্ণেয় লসাগু= ৩ x৩ x২x২x২ x২ = ৮৪।
গণিতে ব্যবহৃত সকল প্রতীক ও তাদের নাম
দ্বিতীয় পদ্ধতি
মৌলিক গুণনীয়কগুলো বের করি।
- ২৪ এর সকল মৌলিক গুণনীয়ক: ২৪ = ২x২x২x৩
- ৩৬ এর সকল মৌলিক গুণনীয়ক: ৩৬ = ২x২x৩x৩
দুইটি সংখ্যার মৌলিক গুণনীয়কগুলোর মধ্যে ২ আছে সর্বাধিক তিন বার (২৪ এর গুণনীয়ক হিসেবে) এবং ৩ আছে সর্বাধিক ২ বার (৩৬ এর গুণনীয়ক হিসেবে)।
সুতরাং ২৪ ও ৩৬ এর লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক বা ল.সা.গু. = ২x২x২x৩x৩= ৭২।
৩য় পদ্ধতি (সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি)
এই পদ্ধতিতে প্রদত্ত সংখ্যাগুলেfর সবগুলোর সকল মৌলিক উৎপাদক একেকটি করে বের করা হয়। এইসব মৌলিক উৎপাদকগুলোর গুণফলই প্রদত্ত সংখ্যাগুলোর ল.সা.গু.।
উদাহরণ:-১। ১৮, ২৪ ও ৪০ এর ল.সা.গু. নির্ণয় করি।
মৌলিক সংখ্যার নাড়ি-ভুড়ি
নির্ণেয় ল. সা. গু. = ২x২x২x৩x৩x৫ = ৩৬০
ল.সা.গু. নির্ণয়ের সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি মৌলিক উৎপাদকের সাহায্যে ল.সা.গু. নির্ণয়েরই একীভূত রূপ। সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে প্রত্যেক ধাপে সংখ্যাগুলোকে এমন একটি মৌলিক সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা হয়, যা অন্তত দুইটি সংখ্যার উৎপাদক। কোন সংখ্যা ঐ ধাপে নেওয়া মৌলিক উৎপাদক দ্বারা ভাগ করা না গেলে সেটি অপরিবর্তিতভাবে পরের ধাপে নামাতে হবে। সর্বশেষ ধাপের সংখ্যাগুলোর কোনো সাধারণ মৌলিক উৎপাদক থাকবে না।
গ.সা.গু. ও ল.সা.গু. এর কয়েকটি সাধারণ সূত্র:
(1) দুটি সংখ্যার গুণফল= সংখ্যা দুটির ল.সা.গু. ×গ.সা.গু. ।
(2) সংখ্যা দুটির ল.সা.গু= সংখ্যা দুটির গুণফল÷ গ.সা.গু.।
(3) সংখ্যা দুটির গ.সা.গু. = সংখ্যা দুটির গুণফল ÷ ল.সা.গু. ।
(4) একাধিক ভগ্নাংশের ল.সা.গু.= (লবগুলির ল.সা.গু.)÷(হরগুলির গ.সা.গু)
(5) একাধিক ভগ্নাংশের গ.সা.গু.= (লবগুলির গ.সা.গু.)÷(হরগুলির ল.সা.গু)
(6) যে কোন তিনটি সংখ্যা x,y ও z যে বৃহত্তম সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য সেটি হল x,y ও z -এর গ.সা.গু. ।
উদা: কোন বৃহত্তম সংখ্যার দ্বারা 66, 110 ও 165 বিভাজ্য ?
(7) যে কোন তিনটি সংখ্যা x,y ও z দ্বারা যে ক্ষুদ্রতম সংখ্যা বিভাজ্য সেটি হল x,y ও z -এর ল.সা.গু. ।
উদা: 8,12 ও 16 দ্বারা বিভাজ্য ক্ষুদ্রতম সংখ্যাটি কত ?
(8) যে ক্ষুদ্রতম সংখ্যা, যাকে যে-কোনো তিনটি সংখ্যা x, y এবং z দ্বারা ভাগ করলে ভাগশেষ হয় যথাক্রমে a, b এবং c সেটি হল= (x,y ও z-এর লসাগু)-K ,যেখানে K=x-a=y-b=z-c.
উদা: কোন ক্ষুদ্রতম সংখ্যাকে 48,72 ও 96 দ্বারা ভাগ করলে প্রতিক্ষেত্রে 42, 66 ও 90 ভাগশেষ থাকবে।
(9) যে বৃহত্তম সংখ্যা যার দ্বারা যে-কোনো তিনটি সংখ্যা x, y এবং z কে ভাগ করলে প্রতিক্ষেত্রে ভাগশেষ a থাকে , সেটি হল=(x-a),(y-a) ও(z-a) -এর গসাগু।
উদা: কোন বৃহত্তম সংখ্যা দ্বারা 303 ও 207 -কে ভাগ করলে প্রতিক্ষেত্রে 3 ভাগশেষ থাকবে।
(10) যে বৃহত্তম সংখ্যা যার দ্বারা x, y এবং z তিনটি সংখ্যা ভাগ করলে যথাক্রমে a, b ও c ভাগশেষ থাকে, সেটি হল=(x-a),(y-b) ও (z-c) এর গসাগু।
উদা: কোন বৃহত্তম সংখ্যা দ্বারা 320 ও 437-কে ভাগ করলে যথাক্রমে 5 ও 2 ভাগশেষ থাকবে।
(11) যে বৃহত্তম সংখ্যা যার দ্বারা a, b ও c -কে ভাগ করলে একই ভাগশেষ থাকবে, সেটি হল=(b-a) ও (c-b) -এর গসাগু।
ল.সা.গু. ও গ.সা.গু.
প্রিয় পাঠক আগমী পোষ্টে থাকবে ভগাংশের ল.সা.গু. ও গ.সা.গু. নিয়ে বিস্তারিত। আমাদে সাথে থাকার জন্য অনুরোধ করছি। আমাদের ফেইজবুক পেইজে লাইক দিতে নিচের বাটনে ক্লিক করুন।