Health Tips

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

ADX Ads

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা: আপনারা থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে সঠিক স্থানে এসেছেন আমরা আপনাকে থানকুনি পাতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ জানাবো। যাতে করে থানকুনি পাতার সঠিক ব্যবহার করতে পারেন এবং নিজেদের সমস্যার সমাধান খুব সহজে করতে পারবেন।

ADX ads 2

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

আমরা সকলেই জানি থানকুনি পাতার উপকারিতা রয়েছে অনেক। কিন্তু এই উপকারিতা পাওয়ার জন্য আমাদের প্রয়োজন সঠিক কার্যপ্রক্রিয়া। তাই আজ আপনাদের মাঝে আমরা থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব, চলুন তাহলে শুরু করি আজকের আলোচনা

থানকুনি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানার আগে আমাদের জানতে হবে থানকুনি পাতা কি? থানকুনি পাতাকে ল্যাটিন শব্দে Centella Aciatica বলা হয়। তবে গ্রাম অঞ্চলে এই পদ্ধতিকে সকলে থানকুনি পাতা হিসেবে চিনে থাকে।

থানকুনি পাতা হচ্ছে একটি ঔষধি গাছ। আর এই পাতা সঠিকভাবে সেবন করলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং দেহের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধান করে থাকে।

থানকুনি পাতার বিশেষ প্রক্রিয়াজাত করণের মাধ্যমে সেবন করা হয় এবং বহু রোগ থেকে উপশম পাওয়া যায়।

থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম
থানকুনি পাতা খাওয়ার বিশেষ কোনো নিয়ম নেই। তবে আপনারা রোগের কারণ বিশ্লেষণ করে থানকুনি পাতা বিভিন্ন উপায়ে খেতে পারেন। যেমনঃ থানকুনি পাতার রস, ভর্তা, বরি ইত্যাদি। এছাড়া থানকুনি পাতা সংরক্ষণ করার জন্য আপনারা থানকুনি পাতা ভালো করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে এর পাউডার তৈরি করে নিতে পারেন।

পেটের পীড়া জনিত সমস্যায় থানকুনি পাতার রস খেতে পারেন। তবে গ্রাম অঞ্চলের মানুষ এখনও থানকুনি পাতার ভর্তা নিয়মিত খেয়ে থাকে।

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
থানকুনি পাতার উপকারিতা অনেক রয়েছে। তবে এর অপকারিতা নেই বললেই চলে। চলুন তাহলে জেনে থানকুনি পাতার উপকারিতা সম্পর্কেঃ-

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে:
আমাদের প্রত্যেকের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে, কারও কম কারও বেশি। কিন্তু আমরা এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের এলোপ্যাথিক এবং হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সেবন করে থাকি। আমরা যদি এ ধরনের ঔষধ থেকে বিরত হয়ে একটি ঔষধি গাছ থেকে ঔষধ গ্রহন করি তাহলে খুব উপকারে আসে।

তাই ওষুধ হিসেবে গ্যাস্ট্রিকের জন্য থানকুনি পাতা বিশেষ উপকার নিয়ে আসে। এটি আপনারা খুব সহজেই করতে পারবেন। আর এই থানকুনি পাতা সেবন করলে আপনার দেহের অন্য কোন অঙ্গপ্রতঙ্গের ক্ষতি করবে না।

থানকুনি পাতার রসের সাথে হাফ লিটার দুধ এবং সামান্য মিশ্রি একসাথে মিশিয়ে সেবন করলে আপনাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। প্রতিদিন সকাল বেলা এই মিশ্রণ থেকে ১ থেকে ২ চামচ সেবন করলে আপনারা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।

কাশি রোদ:
যাদের অনেকদিন ধরে কাশি হচ্ছে কিন্তু সহজে তা থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না তাদের জন্য থানকুনি পাতার রস অন্যরকম ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন ২ চা চামচ থানকুনি পাতার রস চিনির সাথে মিশিয়ে খেলে কাশি কমে যায়।

এই সেবন প্রক্রিয়া এক সপ্তাহ চালিয়ে গেলে শুকনো কাশি সহ অন্যান্য সকল কাশি জনিত সমস্যা দূর হয়ে যায়।

জ্বর কমায়:
আমরা সকলেই জানি যে এক ঋতু থেকে অন্য ঋতুতে প্রকৃতি পরিবর্তনের সময় জ্বরের প্রকোপ বেড়ে যায়। আর এই সময় থানকুনি পাতার রস খেলে এ ধরনের জ্বর থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায়।

তার জন্য এক চা-চামচ থানকুনি পাতার রস এবং এক চা-চামচ শিউলি পাতার রস একসাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকাল বেলা খালি পেটে খেলে সেরে যায় এবং শরীরের দুর্বলতা কমে যায়।

আমাশয় প্রতিরোধ করে:
যাদের আমাশয় সমস্যা রয়েছে তারা যদি এক সপ্তাহ খালি পেটে থানকুনি পাতার রস খেয়ে থাকে তাহলে সারা জীবনের জন্য আমার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

আর এই থানকুনি পাতার রসের সাথে সামান্য পরিমাণ চিনি মিশ্রিত করে প্রতিদিন দুই চামচ করে সেবন করলে পেটের যেকোন সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি:
আমরা নারীরা সকলেই ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের উপাদান ব্যবহার করে থাকি। আর এই অন্যতম উপাদান গুলোর মধ্যে থানকুনি পাতা মুখ্য ভূমিকা রাখে।

থানকুনি পাতায় রয়েছে অ্যামাইনো এসিড, বিটা ক্যারোটিন, ফ্যাটি এসিড এবং ফাইটোকেমিক্যাল। যা ত্বকের পুষ্টি বজায় রাখে এবং ত্বকের বলিরেখা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। থানকুনি পাতা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান করে থাকে।

চুল পড়া রোধ:
যাদের চুল অধিক পরিমাণে ঝরে পড়ে এবং নতুন চুল গজায় না তাদের জন্য থানকুনি পাতা অন্যতম ভূমিকা পালন করে। আর এই সকল সমস্যা সমাধানের জন্য সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার থানকুনি পাতা বেটে মাথার ত্বকে লাগিয়ে রাখলে মাথার চুল পড়া বন্ধ হয় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি:
প্রতিদিন সকালে থানকুনি পাতার রস খেলে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কোথাও কেটে গেলে সেখানে থানকুনি পাতা বেটে লাগিয়ে দিলে অনেকাংশে সেই ক্ষত সেরে যায়।

থানকুনি পাতা কোথায় পাওয়া যায়
থানকুনি পাতা খুঁজে পাওয়া বর্তমানে খুব সহজ হয়ে পড়েছে। কারণ বর্তমানে বাজারে এবং বড় বড় ডিপার্টমেন্ট স্টোর গুলোতে থানকুনি পাতা খুব সহজেই কিনতে পাওয়া যায়। থানকুনি পাতার উপকারিতা এবং চাহিদা কে কেন্দ্র করে অনেকে থানকুনি পাতা চাষ করছে।

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

এছাড়াও গ্রাম অঞ্চলে থানকুনি পাতা হরহামেশাই খুঁজে পাওয়া যায়। গ্রাম অঞ্চলের বন জঙ্গলে এবং বাড়ির আঙিনাতে খুব সহজেই থানকুনি পাতা খুঁজে পাওয়া যায়। থানকুনি পাতার বিশেষ কোনো যত্ন করার প্রয়োজন হয় না এটি প্রকৃতির নিয়মে একা একা জন্মায় এবং খুব সহজেই পাওয়া যায়।

থানকুনি পাতার উপকারিতা কোন বিকল্প নেই। আমাদের মানব দেহের সকল অঙ্গ প্রতঙ্গের যেকোনো রোগপ্রতিরোধ সম্পর্কিত সমস্যা থানকুনি পাতা কোনো জুড়ি নেই।

এছাড়াও প্রতিদিন অল্প পরিমাণে থানকুনি পাতার রস খেলে দেহের যে কোন রোগ কম হয়। আপনারা যদি এই থানকুনি পাতা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আমাদের নিচের কমেন্ট সেকশনে এসে জানাতে পারেন।

নিয়মিত থানকুনি পাতার রস খাওয়া শুরু করলে একাধিক উপকার মেলে। বিশেষত, শরীরের যত্নে এই প্রাকৃতিক উপাদানটির কোনও বিকল্প (Thankuni Patar Upokarita In Bengali) হয় না বললেই চলে।

১| ক্ষতের চিকিৎসায় কাজে আসে (Relieves Wound Pain)
কোথাও কেটে গেলে সেখানে যদি অল্প করে থানকুনি পাতা (Thankuni Leaf) থেঁতো করে লাগানো যায়, তা হলে দারুণ উপকার পাবেন। এই পাতায় রয়েছে Saponins নামে একটি উপাদান, যা ক্ষতস্থানে রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়, যে কারণে ক্ষত শুকিয়ে যেতে সময় লাগে না। ক্ষতস্থানে কোনও ধরনের সংক্রমণ (Thankuni Benefits) হওয়ার আশঙ্কাও কমে।

২| সারা শরীরে রক্তের প্রবাহে উন্নতি ঘটে (Increases Blood Flow)
নিয়মিত থানকুনি পাতার রস (Centella Asiatica) খেলে ব্লাড ভেসেলের যে দেওয়াল রয়েছে, তার ক্ষমতা যেমন বাড়ে, তেমনই সারা শরীরে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়। ফলে দেহের প্রতিটি অঙ্গে বিশুদ্ধ রক্ত পৌঁছে যাওয়ার কারণে রোগ-ব্যাধির প্রকোপ কমতে (Thankuni Patar Upokarita) সময় লাগে না। বাড়ে শরীরের ক্ষমতাও। সেই সঙ্গে পা ফুলে যাওয়া এবং পায়ে যন্ত্রণা হওয়ার মতো সমস্যাও দূরে থাকে।

৩| রক্ত জমে থাকার আশঙ্কা কমায় (Prevents Blood Clots)

রক্ত জমাট বাঁধার আশঙ্কা কমাতে থানকুনি পাতার উপকারিতা প্রচুর। থানকুনি পাতায় উপস্থিত নানা মিনারেল এবং উপকারী উপদানের কারণে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা কমে, যে কারণে Thrombosis-এর মতো রোগ দূরে থাকতে বাধ্য হয় (Thankuni Pata Medicinal Uses In Bengali)। তা ছাড়া রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটা একেবারেই উচিত নয়। কারণ এমনটা ঘটলে রক্তের প্রবাহে বিঘ্ন ঘটে। ফলে হার্ট, কিডনি এবং মস্তিষ্কের যেমন মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তেমনি শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলিও কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে (Thankuni Leaf Benefits In Bengali)। তাই এই বিষয়ে সাবধান থাকাটা জরুরি। আর সেই কারণেই তো থানকুনি পাতার রস না খেলেই নয়!

৪| শরীরের ভিতরে প্রদাহের মাত্রা কমায় (Reduces Inflammation)


কোনও কারণে শরীরের ভিতরে যদি ইনফ্লেমেশন বা প্রদাহের মাত্রা বেড়ে যায়, তা হলে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, সঙ্গে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে আরও নানা ধরনের সমস্যা। এক্ষেত্রে জয়েন্টে ব্যথা, বারে-বারে জ্বর আসা, ক্লান্তি (Thankuni Pata Medicinal Uses In Bengali), মাথা যন্ত্রণা, খিদে কমে যাওয়া এবং পেশিতে যন্ত্রণা হওয়ার মতো লক্ষণগুলি প্রকাশ পায়। এই সময় যদি সঠিক চিকিৎসা শুরু করা না যায়, তা হলেই বিপদ! তবে এমন পরিস্থিতি আসার আগেই কিন্তু ড্যামেজ কন্ট্রোল (থানকুনি পাতার উপকারিতা) করা সম্ভব। কীভাবে তাই ভাবছেন? এক্ষেত্রে প্রতিদিন থানকুনি পাতার রস খেতে হবে (Thankuni Pata Benefits In Bengali), তা হলেই মিলবে সুফল। কারণ, এই প্রাকৃতিক উপাদানটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপদান, যা নিমেষে প্রদাহের মাত্রা কমায়। সঙ্গে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের মতো সমস্যাকেও দূরে রাখে। কমায় জয়েন্টের ব্যথা।

৫| স্টমাক আলসারের মতো রোগ দূরে রাখে (Prevents Stomach Ulcer)
Asiaticoside নামে একটি উপাদান রয়েছে থানকুনি পাতায়, যা হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। সেই সঙ্গে স্টমাক আলসারের মতো রোগের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, পেট খারাপ বা ডায়রিয়ার চিকিৎসাতেও (Benefits of Thankuni Leaves) অনেক সময় এই পাতাটিকে কাজে লাগানো হয়ে যাকে।

৬| অ্যাংজাইটি এবং মানসিক অবসাদের প্রকোপ কমায় (Treats Depression and Anxiety)
Thankuni-Pata-Benefits-In-Bengali

এমন ধরনের সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাদের নিয়মিত করে খেতে হবে থানকুনি পাতার রস (Thankuni Leaf Benefits), তা হলেই মিলবে উপকার। কারণ, এতে রয়েছে এমন কিছু উপাদান, যা Serotonin হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়, যে কারণে Cortisol, মানে স্ট্রেস হরমোনের প্রভাব কমতে শুরু করে। ফলে অ্যাংজাইটি এবং মানসিক অবসাদের প্রকোপ কমতে (Thankuni Pata Benefits In Bengali) সময় লাগে না। এমনকী, স্ট্রেস লেভেলও যেমন কমে, তেমনই বারে-বারে অ্যাংজাইটি অ্যাটাকের কবলে পড়ার আশঙ্কাও কমে।

৭| মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ে (Natural Brain Booster)
নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং Pentacyclic Triterpenes নামক একটি উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যে কারণে ব্রেন সেলের ক্ষমতা এতটাই বেড়ে যায় যে স্মৃতিশক্তির উন্নতি তো ঘটেই, সেই সঙ্গে বুদ্ধির ধারও বাড়ে চোখে পড়ার মতো। এই কারণেই তো ছোট বাচ্চাদের থানকুনি পাতার রস (Centella Asiatica) খাওয়ানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। বয়স্ক মানুষরাও যদি নিয়মিত থানকুনি পাতার রস খান, তা হলে শেষ বয়সে অ্যালঝাইমার্স বা ডিমেনশিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে।

৮| অনিদ্রার সমস্যা দূর হয় (Helps to Beat Insomnia)
রাতে কি ঠিক মতো ঘুম হয় না? তা হলে আজ থেকেই খাওয়া শুরু করুন থানকুনি পাতা। দেখবেন, উপকার (Thankuni Patar Upokarita In Bengali) মিলবে একেবারে হাতে-নাতে। কারণ, এতে রয়েছে একাধিক অ্যান্টিঅক্সিডান্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা স্ট্রেস লেভেল কমায়। সঙ্গে নার্ভাস সিস্টেমকে শান্ত রাখে। ফলে অনিদ্রার মতো সমস্যা দূরে পালাতে সময় লাগে না।

৯| শরীরকে বিষমুক্ত করে (Cleanse Harmful Toxins from Your Body)
নানা ভাবে আমাদের শরীরে প্রবেশ করা টক্সিক উপাদানদের যদি সময় থাকতে-থাকতে বের করে দেওয়া না যায়, তা হলে কিন্তু চিন্তার বিষয়। কারণ, সেক্ষেত্রে এই সব ক্ষতিকর উপাদানগুলির কারণে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এখন প্রশ্ন হল, টক্সিক উপাদানদের শরীর থেকে বের করবেন কীভাবে? এক্ষেত্রে ভরসা রাখতে পারেন, থানকুনি পাতার উপরে (Thankuni Pata Medicinal Uses In Bengali)। প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠা মাত্র ২ চামচ থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে যদি ১ চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়া যায়, তা হলে রক্তে মিশে থাকা টক্সিক উপাদানগুলি প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। ফলে শরীরের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না।

১০| জ্বরের চিকিৎসায় কাজে আসে (Helps to Treat Fever)
প্রচণ্ড তাপদাহের পরে এবার বৃষ্টি এল বলে। এই সময় তাপমাত্রা ওঠা-নামা করার কারণে অনেকেই জ্বরের খপ্পরে পড়বেন। তখন থানকুনি পাতা (Thankuni Pata) খেতে ভুলবেন না যেন। সকালে খালি পেটে এক চামচ থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে ১ চামচ শিউলি পাতার রস মিশিয়ে খেলে জ্বরের প্রকোপ কমতে (Thankuni Patar Upokarita) সময় লাগে না। এমনকী, সর্দি-কাশির মতো সমস্য়াও কমে অল্প দিনে।

১১| ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে থাকে (Controls Blood Pressure)

যাঁদের পরিবারে এমন জটিল রোগের ইতিহাস রয়েছে, তাঁদের ৩০ পেরনো মাত্রা নিয়ম করে থানকুনি পাতা খেতে হবে (Thankuni Pata Medicinal Uses In Bengali)। কারণ, এতে উপস্থিত নানা উপকারী উপাদান রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। সেই সঙ্গে হার্টের দেখভালেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। বিশেষ করে Atherosclerosis, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের মতো রোগকে দূরে রাখতে এই প্রাকৃতিক উপাদানটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। তবে মাথায় রাখবেন, যাঁরা ইতিমধ্যেই প্রেশারের রোগে ভুগছেন, তাঁর থানকুনি পাতা খাওয়ার আগে একবার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে ভুলবেন না যেন!

১২| ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে (Helpful for Weight Mangement)
বেশি মাত্রায় ক্যালরি রয়েছে, এমন খাবার এড়িয়ে চলার পাশাপাশি নিয়ম করে হাঁটাহাঁটি করলে এবং থানকুনি পাতা (Centella Leaves) খেলে ওজন কমবে চোখে পড়ার মতো। কারণ, নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। ফলে শরীরের ইতি-উতি মেদ জমার আশঙ্কা আর থাকে না (Thankuni Pata Benefits)। এছাড়াও চুলের যত্নে থানকুনি পাতার রস অনেক কাজে লাগে।

আরও পড়ুন: টোম্যাটো: ত্বক, চুল ও স্বাস্থ্যরক্ষার কাজে লাগান এই লাতিন আমেরিকান ফলটিকে!

থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম (Thankuni Pata Recipes)

থানকুনি পাতার উপকারিতা তো আপনারা দেখলেনই এবার জানুন থানকুনি পাতার গুনাগুন সম্বন্ধে। সকাল-সকাল খালি পেটে থানকুনি পাতার রস খেলে যেমন উপকার (Benefits of Thankuni Pata) মেলে, তেমনই কাঁচা থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলেও সমান উপকার পাওয়া যায়। ইচ্ছে হলে খেতে পারেন থানকুনি পাতার পেস্ট অথবা বড়াও। আবার এই পাতা দিয়ে তৈরি পানীয় (Uses of Thankuni) খেলেও একই উপকার মেলে।

১| থানকুনি পাতা বাটা তৈরির রেসিপি (Thankuni Pata Bata/Paste)
গরম ভাতের সঙ্গেও থানকুনি পাতা খেতে পারেন। এক্ষেত্রে থানকুনি পাতার পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে (থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম)। আর তার জন্য় প্রয়োজন পড়বে তিনটে থানকুনি পাতার, সঙ্গে লাগবে দুটো কাঁচা লঙ্কা, ১ চামচ কালো জিরা, ১ চামচ তেল এবং অল্প পরিমাণ চিনির। প্রথমে থানকুনি পাতা (Thankuni Pata) গুলিকে ভাল করে ধুয়ে নিতে পাঁচ মিনিট হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সময় হয়ে গেলে জলটা ছেঁকে নিন। এরপরে মিক্সিতে থানকুনি পাতা, কালো জিরে, নুন, চিনি এবং কাঁচা লঙ্কা ফেলে একটা পেস্ট বানিয়ে নিন। এবার হালকা আঁচে এক চামচ সরষের তেল গরম করে তাতে পেস্টটা মিশিয়ে ২ মিনিট একটু নাড়িয়ে নিন। তারপর গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

২| থানকুনি পাতার বড়া তৈরির পদ্ধতি (Thankuni Pakora)
খেতে পারেন থানকুনি পাতার বড়াও। এই পদটি তৈরি করতে প্রয়োজন পড়বে ১০-১২ টা থানকুনি পাতা, ২-৩ টে কাঁচা লঙ্কা, ১ টা পেঁয়াজ, স্বাদ অনুসারে নুন, এক চিমটে হলুদ গুঁড়ো, এক চিমটে লঙ্কা গুঁড়ো, ৩ চামচ বেসন এবং পরিমাণ মতো তেলের। প্রথমে পাতাগুলি ভাল করে ধুয়ে নিয়ে ছোট-ছোট টুকরো করে নিতে হবে। এবার একটা বাটিতে থানকুনি পাতা (Thankuni Pata Benefits In Bengali),

পেঁয়াজ কুঁচি, লঙ্কা কুঁচি, হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, নুন, পরিমাণমতো বেসন এবং অল্প করে জল নিয়ে ভাল করে মেখে ফেলতে হবে। তারপর একটা প্যানে পরিমাণমতো তেল নিয়ে একটু গরম করে নিন। তেলটা গরম হওয়ামাত্র বেসনের মিশ্রণ থেকে অল্প-অল্প করে নিয়ে তেলে ছাড়তে থাকুন (থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম)। যখন বড়ার রং হলকা খয়েরি হতে শুরু করবে, তখন প্যান থেকে তুলে একটা পাত্রে সংগ্রহ করুন। গরম ভাত আর ডালের সঙ্গে থানকুনি পাতার বড়া খেতে কিন্তু মন্দ লাগবে না।

৩| থানকুনি পাতা দিয়ে তৈরি পানীয় (Thankuni Drinks)
২৫০ গ্রাম থানকুনি পাতা নিয়ে ভাল করে পরিষ্কার করে নিন। তারপর একটা গ্লাসে থানকুনি পাতাগুলি (Uses of Thankuni) নিয়ে তাতে এক কাপ জল মিশিয়ে নিন। এবার সেই মিশ্রণটা ব্লেন্ডারে ফেলে ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর ছেঁকে নিয়ে তাতে ৪ চামচ চিনি এবং এক চিমটে নুন মিশিয়ে ততক্ষণ গরম করুন, যতক্ষণ না চিনিটা ঠিক মতো মিশে যায়। এবার মিশ্রণটা একটু ঠান্ডা করে নিন। এরপর ২০০ এম এল জল নিয়ে তাতে অল্প করে লেবুর রস (Benefits of Thankuni Leaf) এবং ৫০ এম এল থানকুনি পাতা থেকে তৈরি সেই মিশ্রণটা মিশিয়ে পান করুন।

থানকুনি পাতার ক্ষতি বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া (Thankuni Pata Side Effects)

থানকুনি পাতার ক্ষতি বলতে, ১-২ চামচ থানকুনি পাতার রস (Thankuni Pata) বা অল্প করে কাঁচা থানকুনি পাতা খেলে কোনও ক্ষতিই হয় না। কিন্তু বেশি পরিমাণে খেলেই বিপদ! সেক্ষেত্রে একাধিক সমস্যা (Side Effects) দেখা দিতে পারে। যেমন…

১| মারাত্মক পেটে যন্ত্রণা হতে পারে।
২| মাথা ঘোরার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
৩| চুলকানি এবং অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
৪| হঠাৎ করে রক্তচাপ কমে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
৫| যাঁরা হেপাটাইটিস বা অন্য কোনও লিভারের রোগে ভুগছেন, তাঁদেরও থানকুনি পাতা খাওয়া উচিত নয় (থানকুনি পাতার ক্ষতি)।
৬| আগামী দু’সপ্তাহে যদি কোনও অপারেশন থাকে, তা হলেও থানকুনি পাতা এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।

থানকুনি পাতা নিয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্নের উত্তর (FAQs)
জেনে নিন থানকুনি পাতার উপকারিতা ও গুণাগুণ নিয়ে লেখা কিছু সাধারন প্রশ্নের উত্তর –

১| হবু মায়েরা কি থানকুনি পাতা খেতে পারেন?
প্রেগন্যান্সি সময় আদৌ থানকুনি পাতা খাওয়া উচিত কিনা সেই নিয়ে কোনও আধুনিক গবেষণা হয়নি। তাই এই বিষয়ে একজন আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়াই ভাল।

২| থানকুনি পাতা খেলে কি লিভারের ক্ষতি হয়?
তেমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং এমন ধরণা রয়েছে যে, নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে নাকি লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়ে। তাই এই বিষয়ে একবার চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে ভুলবেন না যেন!

৩| ত্বকের যত্নেও নাকি থানকুনি পাতাকে কাজে লাগানো যায়?
সপ্তাহে বারতিনেক থানকুনি পাতার পেস্ট (Thankuni Leaf Benefits In Bengali) মুখে লাগালে দাগ-ছোপ দূর হয়। সেই সঙ্গে ত্বকের ভিতরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং Saponins নামক একটি উপাদানের মাত্রা বাড়ার কারণে জেল্লাও বাড়ে চোখে পড়ার মতো।

আড়ও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button