উকুন দূর করার উপায় কি এবং উকুন দূর করার উপায় ঔষধ
উকুন দূর করার উপায় কি এবং উকুন দূর করার উপায় ঔষধঃ উকুন একটি পরজীবী প্রাণী। যেটি মাথার চুলের ভেতর বাসা বাঁধে। এতে মাথা সারাক্ষণ চুলকাতে থাকে। এ ছাড়াও বেশ অস্বস্তিকর এবং বিরক্তিকর ব্যাপারও বটে। পুরুষের তুলনায় নারীদের চুলে উকুন বেশি দেখা যায়।
উকুন দূর করার উপায় কি এবং উকুন দূর করার উপায় ঔষধ
আবার শিশুদের জন্যও এটি আরো অনেক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। কারণ বড়দের মতো তারা নিজের যত্ন নিজেরা যেহেতু নিতে পারে না। তাই বাবা-মায়েদের জন্য এটি দুশ্চিন্তার কারণ।
উকুন আসলে এক ধরনের পোকা। যা মাথার ত্বক, ঘাড় এবং চুলের সঙ্গে লেগে থাকে। এদের খাবার হচ্ছে মানুষের রক্ত। একটি তিল বীজের সমান এদের আকার হয়ে থাকে। মাত্র ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ডিম পারে এরা।
একজনের কাছ থেকে অন্যজনের মাথায় সহজেই চলে যেতে পারে উকুন। আবার এমন কারো যার মাথায় উকুন আছে তার চিরুনি, চুলের ক্লিপ, টুপি ব্যবহার করলেও চুলে উকুন হতে পারে।
উকুন চুল ছাড়াও কাপড়ে, চিরুনির সঙ্গে অনেকক্ষণ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। খালি চোখেই এদের দেখা যায়। সাদা, বাদামী এবং ধূসর রঙের হয়ে থাকে। এর ডিমগুলো গোলাকার এবং ডিম্বাকৃতির। যেগুলো চুলের সঙ্গে লেগে থাকে। এটি কোনো ক্ষতিকারক পোকা নয়।
তবে এর কামড়ে সাধারণ চুলকানি থেকে অ্যালার্জি পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। এতে মাথার ত্বকে র্যাশ, লাল হয়ে ফুলে যাওয়া ছাড়াও ঘায়ের সৃষ্টিও করতে পারে। চুলে উকুনের উপদ্রব কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কয়েকদিন স্কুলে বা বাইরে না দিয়ে বাসায় রাখতে পারেন।
চিকিৎসকের দেওয়া উকুন নাশক স্প্রে বা সাবান, শ্যাম্পু যেটাই হোক না কেন নিয়মিত ব্যবহার করুন। ব্যবহৃত বিছানা, বালিশের কাভার, পোশাক গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে ধুয়ে নিন। সেটাও ভালোভাবে পরিস্কার করে নিন।
এ ছাড়াও ঘরোয়া কিছু উপায়ে চুলের উকুন দূর করা যায়। চলুন জেনে নেয়া যাক সেসব-
এজন্য কিছুটা মেয়োনিজ, সাদা ভিনেগার এবং টি ট্রি অয়েল কয়েক ফোঁটা দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার ভালোভাবে চুলের গোঁড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগিয়ে রাখুন আধাঘণ্টা। এরপর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
চিকন দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করতে পারেন। প্রাচীন মিশরীয়রা উকুন দূর করতে কাঠের তৈরি খুবই চিকন দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করত। চুলে শ্যাম্পু করার পর এই চিরুনি দিয়ে ভালোভাবে চুল ব্রাশ করুন। উকুন অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।
পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটু চিটচিটে ভাব আনতে পারে আপনার চুলে। বেশ কয়েকবার শ্যাম্পু করারও প্রয়োজন পড়বে। তবে উকুন দূর করতে খুবই কার্যকরী এটি।
নারকেল তেল ত্বক ও চুলের জন্য খুবই উপকারী, একথা মোটামুটি সবারই জানা। ২০১০ সালে ব্রাজিলে করা এক গবেষণায় দেখা যায়, এটি প্রাকৃতিকভাবে উকুন দূর করতেও খুবই কার্যকরী।
এর সঙ্গে খানিকটা টি ট্রি অয়েল কিংবা লবঙ্গের তেল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে একেবারে খাঁটি নারকেল তেল ব্যবহার করতে হবে। গবেষকদের দাবি, ব্যবহারের ৪ ঘণ্টার মধ্যে ৮০ শতাংশ উকুন মারা যাবে।
নিমের তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। এর গন্ধ খুব কড়া হওয়ায় উকুনের জন্য অসুবিধার হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিমের তেলসহ যেসব তেলের গন্ধ খুব কড়া হয়। সেগুলো উকুন দূর করতে খুবই কার্যকরী।
সাদা ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন। কিছুটা ভিনেগার পানির সঙ্গে মিশিয়ে পুরো চুলে লাগিয়ে নিন। ৩০ থেকে ৪০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। একদিন পরপর ব্যবহার করুন। বিস্তারিত পড়তে পারেন jagonews24 এ।
উকুন হচ্ছে একটি বিরক্তিকর সমস্যা। আর এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সকলেই চায়। মাথায় উকুন হলে তা সহজে দূর হতে চায় না। তাই এই উকুন সমস্যা দূর করার জন্য একটু সময় নিয়ে চেষ্টা করতে হয়।
পুরুষের তুলনায় নারীদের চুলে উকুন বেশি দেখা যায়। আবার শিশুদের জন্যও এটি আরো অনেক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। কারণ বড়দের মতো তারা নিজের যত্ন নিজেরা যেহেতু নিতে পারে না। তাই বাবা-মায়েদের জন্য এটি দুশ্চিন্তার কারণ।
উকুনের উপদ্রবে যারা অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন তাদের জন্য ঘরের মধ্যেই রয়েছে কিছু কার্যকরী উপাদান, যা উকুন তাড়ানোর ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী। কিছু ঘরোয়া এবং প্রাকৃতিক টোটকার মাধ্যমে আপনি সহজেই উকুনের কবল থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
- মেয়নেজ: মাথার উকুন থেকে মুক্তি পেতে কার্যকরী একটি উপাদান হল মেয়নেজ; যা আমরা বার্গার, বারবিকিউ, স্যান্ডউইচ ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্যের স্বাদ আরো মজাদার করতে ব্যবহার করে থাকি। যেকোনো কনফেকশনারী দোকানে আপনি এটি পাবেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, চুলের ত্বকে ভালোমতো মেয়নেজ মেখে তারপর ক্যাপ দিয়ে ঢেকে সারারাত রেখে দিলে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মাথায় থাকা উকুনগুলো মারা যায়। সকালে ভালোমতো চুল চিরুনি করুন। এক্ষেত্রে চুল থেকে উকুনের ডিম বের করার বিশেষ চিরুনি ‘নিট কম্ব’ ব্যবহার করুন। ফলে মৃত উকুন এবং উকুনের ডিম দূর হয়ে যাবে। তারপর চুল ভালোমতো ধুয়ে ফেলুন যাতে মেয়নেজের তৈলাক্ত আস্তরণ পরিষ্কার হয়ে যায়। মেয়নেজের তৈলাক্ত আস্তরণ উঠাতে কয়েকবার ধোয়া লাগতে পারে।
- টি ট্রি অয়েল: আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার একজন ত্বক বিশেষজ্ঞ ড্যানিয়েলে ফিশার বলেন, ‘টি ট্রি অয়েল উকুন নিরাময়ের অন্যতম ঘরোয়া পদ্ধতি, কারণ এতে শক্তিশালী জীবাণুনাশক উপাদান বিদ্যমান।’ টি ট্রি অয়েল ঠিক মেয়নেজের মতো করে চুলে লাগালে উকুন থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। তবে টি ট্রি অয়েল কতক্ষণ চুলে লাগিয়ে রাখতে হবে এবং কতদিন পর পর তা প্রয়োগ করতে হবে সেটা নিয়ে মিশ্র পরামর্শ রয়েছে। তবে অনেকের পরামর্শ হচ্ছে, প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার করে টি ট্রি অয়েল ব্যবহার করে উকুন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- নারকেল তেল: উকুন থেকে রেহাই পেতে নারকেল তেল হল অন্যতম কার্যকরী একটি ঘরোয়া টোটকা। মেয়নেজ এবং টি ট্রি অয়েল দিয়ে যেভাবে শ্বাসরুদ্ধ করে উকুন মারা হয়, ঠিক একই পদ্ধতি অবলম্বনে নারকেল তেল দিয়ে উকুনের বংশ নিপাত করা সম্ভব। নারকেল তেল উকুনদের শুধু শ্বাসরুদ্ধই করে না বরং তাদের একজায়গায় আটকে ফেলে, যাতে তারা অন্য কোথাও পালাতে না পারে।
- পেট্রোলিয়াম জেলি: নারকেল তেলে অনেকের অ্যালার্জি থাকে। তাই তাদের জন্য উকুন তাড়ানোর বিকল্প পদ্ধতি হলো পেট্রোলিয়াম জেলি। এটি এমন একটি কার্যকরী উপাদান যা আপনার ড্রয়ারে বা এখানে ওখানে হয়তো আছে। পেট্রোলিয়াম জেলি দিয়েও মেয়োনেজ, নারকেলের তেলের মতো পদ্ধতিতে উকুন তাড়ানো সম্ভব। কিন্তু পেট্রোলিয়াম জেলির একটা সমস্যা হচ্ছে তা পরিষ্কার করা বেশ ঝামেলার কাজ। বেশ কয়েকবার ধোয়ার পরেও তা পরিষ্কার হতে চায় না। তবে, যাদের চুল ছোট তাদের জন্য পেট্রোলিয়াম জেলি একটি ভালো উপাদান হিসেবে কাজে দিতে পারে, কেননা তাদের ক্ষেত্রে পরিষ্কার করার ঝামেলা তুলনামূলকভাবে কম।
- ভেজা চুলে চিরুনি করা: ভিন নিগুয়েন নামে একজন আমেরিকান ত্বক বিশেষজ্ঞ বলেন, চুল ভেজা থাকা অবস্থায় সামান্য কন্ডিশনার চুলে মাখিয়ে চিরুনি করলে উকুন থেকে বেশ সহজেই রেহাই পাওয়া যায়। ঘরোয়া নানান টোটকাগুলোর মধ্যে এটা বেশ কার্যকরী। সপ্তাহে কমপক্ষে ৩-৪ দিন করে কয়েক সপ্তাহ এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তাছাড়া অন্যান্য প্রাকৃতিক পদ্ধতির সঙ্গে সহযোগী উপায় হিসেবে এটি ব্যবহার করা সম্ভব।
- উকুনের ডিম খুঁজে বের করা: যদিও এই পদ্ধতিটি বেশ সময়সাপেক্ষ, কিন্তু এই পদ্ধতি অবলম্বনের ফলে কেমিক্যালের ব্যবহার এড়ানো সম্ভব। উকুনের ডিম যা সাধারণত নিট নামে পরিচিত তা সূক্ষ চিরুনি বা আঙুলের সাহায্যে চুলের মধ্য থেকে বের করে ফেললে মাথায় নতুন উকুনের জন্ম হয় না। ফলে উকুনের সংখ্যা কমে যায়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে আস্তে আস্তে মাথা থেকে উকুন দূর করা সম্ভব। কিন্তু এই পদ্ধতিটি অন্যান্য পদ্ধতির মতো কার্যকরী নয় কেননা এটি প্রচুর সময়সাপেক্ষ এবং পরিশ্রমসাধ্য। এই পদ্ধতিতে উকুন দূর করতে হলে প্রত্যেকটি উকুন এবং নিট মাথা থেকে খুঁজে বের করতে হবে নতুবা উকুনের উপদ্রব এড়ানো সম্ভব নয়।
- রসুন: উকুনের উপদ্রব দমন করার জন্য রসুনের এই পদ্ধতিটি অনেক প্রাচীন এবং বেশ কার্যকরী। ঘরোয়া উপায়ে রসুনের মাধ্যমে উকুনের চিকিৎসা করতে গেলে রসুনের তীব্র গন্ধ আপনাকে সহ্য করতে হবে। প্রথমে ৮-১০ টা রসুনের কোয়া থেতলে পেস্ট বানিয়ে নিন এবং তাতে কয়েক চা-চামচ লেবুর রস মেশান। তারপর সেই মিশ্রণ আপনার চুলের ত্বকে লাগিয়ে আধা ঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। রসুনের তীব্র গন্ধ উকুন এবং উকুনের ডিম ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। এই ঘরোয়া চিকিৎসা সপ্তাহে একদিন করে কয়েক মাস চালু রাখলে উকুন থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
খেয়াল রাখুন কিছু বিষয়
- চুলে বার বার শ্যাম্পু না করাই ভালো। বেশি শ্যাম্পু ব্যবহার করে উকুন দূর করা যায় না বরং এতে উকুনের লাভ হয়। বার বার শ্যাম্পু করার ফলে মাথার ত্বকের তেল ধুয়ে চলে যায়, ফলে রক্ত নিতে উকুনের আরও বেশি সুবিধা হয়।
- মাথা থেকে উকুন এবং উকুনের ডিম দূর করলেই যে উকুন সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে তা কিন্তু নয়। বিছানা, বালিশ, তোয়ালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
- কখনো নিজের চিরুনি, বালিশ, হেয়ার ব্যান্ড, তোয়ালে, কাপড় ছাড়া অন্যেরটা ব্যবহার করবেন না।